Coco Peat – কোকো পিট কি? ব্যবহার ও উপকারিতা

এশিয়ার কৃষি প্রধান দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সেই সুবাদে বাংলাদেশ এর মানুষ গাছ প্রিয়। গাছকে ভালবাসেনা এইরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর সেই ভাললাগা ও ভালবাসা থেকেই অনেকেই গোঁড় তুলতে চায় গাছ গাছালীর বাগান। অনেকে চেষ্টাও করছেন আবার অনেকে ভাবছেন শুরু করবেন। যারা বাগান করার চিন্তা করছেন বা শুরু করবেন তাদের নানান ধরনের জিজ্ঞাসা থেকে থাকে। প্রতি ব্লগেই আমরা সেরকম কিছু জানানোর বা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে থাকি।তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমাদের আলোচনার বিষয় Coco Peat “কোকো পিট বা কোকো ডাস্ট”।যারা বাগান করছেন তারা মোটামুটি সবাই কোকো পিট বা ডাস্ট এর সাথে পরিচিত। তারপরও কোকো পিট নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন থাকে, যেমন

কোকো পিট কী? কোকো পিট কি দিয়ে তৈরি হয়?

কোকো পিটের উপকারিতা ও অপকারিতা কি?

কি কি গাছে ব্যাবহার করা যায় এবং কিভাবে ব্যাবহার করতে হয়?

কোথায় পাওয়া যায়?

কোকো পিট বা ডাস্ট কি এবং কি দিয়ে তৈরি হয় ?

নারিকেল একটি কৃষি পণ্য আর ছোবড়া এর উপজাত। আর এই নারিকেলের ছোবরা বা কয়ার থেকেই তৈরি করা হয় কোকো পিট। ছাদবাগানে মাটির বিকল্প হিসেবে এখন প্রচুর পরিমানে ব্যাবহার করা হচ্ছে এই কোকো পিট। পানি ধরে রাখা ও পানির সুনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে যেকোনো গাছ খুব সহজেই বেড়ে উঠতে পারে।

নারিকেলের শুকনো ছোবড়া কে মারিয়ে ডাস্ট বের করা হয়, তারপর এগুলোকে কমপ্রেস করে কোকো পিটে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে ছাদবাগানে কোকো পিট বেপক ভাবে জনপ্রিয় ও ব্যাবহার হচ্ছে, এমনকি বাণিজ্যিক চাষের জন্যেও মাটির উন্নত বিকল্প এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোকো পিটের ধরনঃ

দুই ধরনের কোকো পিট রয়েছে।

১। লোকাল কোয়ালিটি
২। এক্সপোর্ট কোয়ালিটি।

লোকাল কোয়ালিটি

প্রতিটি কোকো পিট লোকাল ব্লকের ওজন হয় সাধারণত ৪-৫ কেজি এবং ভেজা অবস্থায় সর্বোচ্চ ২৫-৪০ কেজি হয়ে থাকে।

এক্সপোর্ট কোয়ালিটি

এক্সপোর্ট কোয়ালিটির প্রতিটি কোকো পিট ব্লকের ওজন হয় কমবেশি ২.৫ কেজি। পানিতে ভেজানোর পর ওজন হয় ১৫-২০ কেজি।

কোকো পিটের ব্যবহারের উপকারিতা কি?

মাটিবিহীন চাষাবাদ ও বাগান গড়ার বিকল্প মাধ্যম কোকো পিট।

প্রচুর পানি ধারন ক্ষমতা কোকো পিটের সবচে বড় উপকারিতা।

পানি নিষ্কাশন বেবস্থা ভালো হওয়ায় গাছের শিখড় বা মুলে পঁচন ধরে না।

কোকো পিট বেবহৃত গাছে পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন ও বাতাস চলাচল করতে পারে। ফলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।

কোকো পিট বেবহৃত গাছে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়, ফলে গাছ সুস্থ থাকে।

কোকো পিটে প্রাকৃতিক মিনারেল থাকে যা উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি এবং উপকারী অণুজীব সক্রিয় করার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে।

কোকো পিট (Coco Peat) ১০০% জৈব উপাদান। তাই কোকো পিটে গাছের মৃত্যুহার খুব কম।

বীজতলা ও বীজ থেকে চারা উৎপাদনের জন্য কোকো পিট সবচেয়ে জনপ্রিয়।

কোকো পিটে রাসায়নিক সার না মিশিয়ে শুধুমাত্র জৈব বা কম্পোষ্ট মিশিয়ে চাষ করা সম্ভব।

বহনের ক্ষেত্রে মাটির তুলনায় কোকো পিট বেশি প্রাধান্য পায়।

কোকো পিটের অপকারিতা কি?

কোকো পিটে প্রাকৃতিক ভাবে লবণ থাকে। তাই পোটিং মিশ্রণের জন্য ভাল মানের ব্যবহার করতে হবে এবং পুষ্টির সমন্বয়টি কোকো পিটের লবণের কথা মাথায় রেখে সমন্বয় করতে হবে।

কোকো পিটে লবণের কারণে হাইড্রোপোনিক সিস্টেমে কোকো পিট পুনর্ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত থাকে না।

কম্প্রেস করা কোকো পিট উৎপাদনের কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যাবহার করতে হয়।

কোকো পিটের চাহিদা বাড়ছে তাই অসৎ বেবসায়ীরা দামের তারতম্য করেছে।

উচ্চ চাহিদার কারণে নিম্নমানের কোকো পিট বাজারে প্রবেশ করেছে। তাই গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছে।

কোকো পিট প্রয়োগ ও ব্যবহারের নিয়মাবলীঃ

সব ধরনের গাছেই কোকো পিট ব্যাবহার করা যায়। যেহেতু কমপ্রেস বা চাপ প্রয়োগ করে কোকো ডাস্ট থেকে কোকো পিটে রূপান্তর করা হয়, তাই এটি একটি শক্ত বস্তুর মত থাকে। কোকো পিটকে পানিতে ভিজিয়ে পানি ঝড়িয়ে কোকো ডাস্টে রূপান্তর করতে হয়। তারপর এটা সরাসরি ব্যাবহার করা যায়।

টবে, বড় ড্রামে বা বেডে বা বীজ থেকে চারা তৈরীর জন্য কোকো পিট ব্যাবহার করা হয় খুব ব্যাপক ভাবে।

বীজ থেকে চারা তৈরীতে কোকো পিটের ব্যাবহারঃ

বীজ থেকে চারা তৈরীর জন্য সরাসরি কোকো ডাস্ট ব্যাবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে কোকো ডাস্ট গুলো ভালো ভাবে ধুয়ে হালকা শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর যেমন পাত্রে কোকো ডাস্ট গুলো নিয়ে আপনার বীজ গুলো রপন করে দিন। রপন করা বীজের পাত্রটাকে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করতে একটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে সেমি শেড বা আধা ছায়া যুক্ত স্থানে রেখে দিন।

টবে বা বড় ড্রামে কোকো পিটের ব্যাবহারঃ

টবে বা বড় ড্রামে গাছ লাগানো বা প্রতিস্থাপনের জন্য কোকো পিটের ব্যাবহার গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে কোকো ডাস্ট গুলো ভালো ভাবে ধুয়ে হালকা শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর কোকো পিট ভার্মি কম্পোস্ট/জৈব সার ও পঁচা গোবর মিশিয়ে টব বা ড্রামের মাটি প্রস্তুত করতে হবে।

টব বা বড় ড্রামে নিন্মের রেসিও অনুযায়ি মিশ্রন তৈরি করতে পারেন।

টবের জন্যঃ কোকো পিট ৫০% + ২৫% ভার্মি কম্পোস্ট/জৈব সার + ২৫% পঁচা গোবর
ড্রামের জন্যঃ কোকো পিট ৩০% + ভার্মি কম্পোস্ট/জৈব সার ২০% + পঁচা গোবর ২০%

কোকো পিট কোথায় পাওয়া যায়?

বর্তমানে প্রায় সকল নার্সারি গুলোতেই কোকো পিট (Coco Peat) পাওয়া যায়। তা ছাড়া স্থানীয় সারের দোকান গুলোতেও পাওয়া যায়। না পাওয়া গেলে অনেক ক্ষেত্রে দোকান বা নার্সারিতে অর্ডার দিলে তারা আনে দেয়। বর্তমানে এর চাহিদা বাড়ায় প্রায় সব অনলাইন সপ গুলোতেও কোকো পিট পাওয়া যাচ্ছে। যদি মনে করেন আমাদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।